একজন হুমায়ুন আহমেদ - Biography of Humayun Ahmed


হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ফয়জুর রহমান আহমেদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। তার রচিত আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় ছেলেবেলা হুমায়ূন আহমেদের নাম ছিল শামসুর রহমান। ডাকতাম ছিল কাজল, যা পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদ রাখা হয়।

Humayun Ahmed




ছাত্রজীবন
চট্টগ্রামে থাকাকালীন ১৯৬২ থেকে ১৯৬৪ সালে হুমায়ূন আহমেদের নাম ছিল বাচ্চু, জানা যায় তার পিতা ছেলে মেয়েদের নাম একাধিকবার পরিবর্তন করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি এসএসসি পাশ করেন,এরপর তিনি ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন রসায়ন বিভাগে।



১৯৭২  সালে কৃতিত্বের সাথে রসায়নে স্নাতকোত্তর পাশ করার পর রসায়নে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে প্রফেসর যোসেফ এডওয়ার্ড  গ্লাসের  তত্ত্বাবধানে পলিমার কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি ডিগ্রি নেন।

কিন্তু তার আগ্রহ গড়ে ওঠে লেখালেখিতে তাই পরবর্তীকালে লেখা এবং চলচ্চিত্র নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় অধ্যাপনা পেশা ছেড়ে দেন ডক্টর হুমায়ূন আহমেদ। 




সাহিত্য সৃষ্টির সূচনার সময়কাল
১৯৭২ সালে যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সেই সময় তার ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাস এর মাধ্যমে সাহিত্য জগতে আগমন ঘটে। বাংলা সাহিত্যকে তার কলমের ছোয়ায় অনেক উপহার দিয়েছেন তিনি। তার সৃষ্ট হিমু এবং মিসির আলি জনপ্রিয় চরিত্র।

ছোট থেকে গল্প-উপন্যাসের প্রতি এক অসম্ভব টান ছিল তার। তবে তাকে সাহিত্য অনুরাগী করে তোলার পিছনে তাঁর পরিবারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা ছিল তার বাবার, বাড়িতে সাহিত্যের আসর বসত।তার বড় মামাও কবিতা, নাটক লিখতেন।


হুমায়ুন আহমেদের সাহিত্যজীবন
১৯৭২ সালে প্রকাশিত ‘নন্দিত নরকে’র ভূমিকা লিখেছিলেন বাংলা ভাষাশাস্ত্র পন্ডিত আহমদ শরীফ, যা পাঠক শ্রেণীর মনে এক কৌতূহল সৃষ্টি করে। তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ এবং বাংলা কথাসাহিত্যে সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। তিনি শুধুমাত্র ঔপন্যাসিকই নন একাধারে ছোটগল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা।


উপন্যাস ও শ্রেষ্ঠ চরিত্র
তার লেখা প্রথম উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’ কিন্তু প্রকাশিত দ্বিতীয় গ্রন্থ। তার রচিত তৃতীয় উপন্যাসটি হলো ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা ‘ যা কল্পকাহিনীমূলক। তাঁর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস গুলি হল ‘মধ্যাহ্ন’,  ‘জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প’, ‘মাতাল হাওয়া’, ‘লীলাবতী’, ‘কবি’, ‘বাদশাহ নামদার’।

হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় রহস্যময় চরিত্র মিসির আলি,  এর কাহিনীগুলো রহস্যমাত্রিক। মিসির আলি বিষয়ক তার প্রথম উপন্যাস ‘দেবী’, পরবর্তীকালে তিনি এই চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে যেসব উপন্যাস লিখেছিলেন সেগুলি হল ‘নিশিথিনী’,’নিষাদ’,’অন্যভুবন’, ‘বৃহন্নলা’।


মিসির আলি

 তার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি চরিত্র ‘হিমু’। এই চরিত্রটির আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘ময়ূরাক্ষী’ উপন্যাস দিয়ে। পরবর্তীতে এই চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত হয় ‘দরজার ওপাশে’, ‘হিমু’, ‘পারাপার’, ‘এবং হিমু’, ‘হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম’ ইত্যাদি। এই উপন্যাসগুলি একত্রে প্রকাশিত হয় ‘হিমু সমগ্র’, ‘হিমু সমগ্র দ্বিতীয় খন্ড’ এবং’ হিমু অমনিবাস’।

বিবাহ
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৭৩ সালে গুলতেকিন খানকে বিয়ে করেন। তাদের তিন মেয়ে এবং দুই ছেলে, যার মধ্যে একজন অকালে মারা যায়। ২০০৩ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয় এবং ঐ বছরই তিনি তার নাটক চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাওনকে বিয়ে করেন। তাদের তিন ছেলেমেয়ে জন্মগ্রহণ করে, প্রথম ভূমিষ্ঠ কন্যাটি মারা যায়।
হুমায়ুন আহমেদের পরিবার




টেলিভিশন নির্মাতা
নওয়াজিশ  আলি খান হুমায়ুন আহমেদ কে আহবান করেন নাটক লেখার জন্য। ১৯৮৩ সালে নওয়াজিশ আলি খানের পরিচালনায় তার প্রথম টেলিভিশন নাটক ‘প্রথম প্রহরে’ই নাটকটি ব্যাপক সাফল্য পেলে নওয়াজিশ আলি খানের পরিচালনায় হুমায়ূন আহমেদের রচিত অযাত্রা, বিবাহ, অসময়, নিমফুল, নাটকের প্রযোজনা করেন। হুমায়ূন আহমেদ রচিত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’।

তার অন্যতম ধারাবাহিক নাটক গুলি হল- একদিন হঠাত্’, ‘এবং আইনস্টাইন’, ‘আজ জরির বিয়ে’, ধারাবাহিক ‘আজ রবিবার’, ‘একটি অলৌকিক ভ্রমণ কাহিনি’, ‘এই বৈশাখে’, ‘এই বর্ষায়’, ধারাবাহিক ‘এইসব দিনরাত্রি’, সিক্যুয়েল ‘আমরা তিন জন’, ধারাবাহিক ‘অয়ময়’, ‘অন্তরার বাবা’, ‘আংটি’, ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’, ‘বাদল দিনের গান’, ‘ব্যাংক ড্রাফট’, ‘ভূত বিলাস’, ‘বিবাহ’, ‘বন কুমারী’, ‘বন বাতাসি’, ‘বৃহন্নলা’, ধারাবাহিক ‘বহুব্রীহি’, ‘বন্য’, ‘বউ বিলাস’, ‘চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক’, ‘চেরাগের দৈত্য’, ‘চিপা ভূত’, ‘ছেলে দেখা’, ‘চোর’, ‘চৈত্র দিনের গান’, ‘চন্দ্রগ্রহণ’, ‘চন্দ্র কারিগর’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘দূরত্ব’, ‘দুই দুকোনে চার’, ‘একা’, ‘এ কী কাণ্ড’, ‘এনায়েত আলীর ছাগল’, ‘গণি সাহেবের শেষ কিছুদিন’, ‘গন্ধ’, ‘গৃহ সুখ প্রাইভেট লিমিটেড’, ‘গুণীন’, ‘হাবিবের সংসার’, ‘হাবলঙ্গের বাজার’, ‘হামিদ মিয়ার ইজ্জত’, সিক্যুয়াল ‘হিমু’, ‘ইবলিশ’, ‘জহির কারিগর’, ‘জীবন যাপন’, ‘জোত্স্নার ফুল’, ‘জুতা বাবা’, ‘জুতার বাক্স’, ‘জইতুরি’, ‘যমুনার জল দেখতে কালো’, ‘জল তরঙ্গ’, ‘জলে ভাসা পদ্ম’, ধারাবাহিক ‘কালা কইতর’, ‘কাকারু’, ‘খোয়াব নগর’, ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘কন্যা দেখা’, ‘কূহুক’, ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’, ধারাবাহিক ‘মেঘ বলছে যাব যাব’, ‘মিসকল’, ‘মফিজ মিয়ার চরিত্র’, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন’, ‘নাট্য মঙ্গলের কথা’, ‘নিম ফুল’, ‘নগরে দ্বৈত্য’, ধারাবাহিক ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’, ‘নূরুদ্দিন স্বর্ণপদক’, ধারাবাহিক ‘অচীন রাগিনী’, ‘অনুসন্ধান’, ‘ওপেন্টি বায়োস্কোপ’, ‘অপরাহ্ন’, ‘অতঃপর শুভ বিবাহ’, ‘পাপ’, ‘পাথর’, ‘প্রজেক্ট হিমালয়’, ‘পদ্ম’, ‘পুষ্পকথা’, ধারাবাহিক ‘রুমালী’, ‘রূপকথা’, ‘রূপার ঘণ্টা’, ধারাবাহিক ‘রূপালি রাত্রি’, ‘সোনার কলস’, ‘সবাই গেছে বনে’, ‘শওকত সাহেবের গাড়ি কেনা’, ‘রুবিক্স কিউব’, ধারাবাহিক রুপালি নক্ষত্র’, ‘স্বপ্ন এবং স্বপ্ন ভঙ্গ’, ইত্যাদি। 

চলচ্চিত্র নির্মাণ
জনপ্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ চলচ্চিত্র নির্মাণেও সফল হয়েছিলেন। চলচ্চিত্র নির্মাণে তার যাত্রা শুরু হয় ১৯৯২ সালে। চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান হুমায়ুন আহমেদের ‘শঙ্খনীল কারাগার’ উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ন করেন। চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু ১৯৯৪ সালে ‘ আগুনের পরশমনি’ থেকে।


‘আগুনের পরশমনি’ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। এরপর ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে তার রচিত ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’ এবং ‘আমার ভাঙ্গা ঘরে’ গানটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার জনপ্রিয় চলচ্চিত্র গুলি হল- ‘দুই দুয়ারী’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ ‘আমার আছে জল’ এবং সর্বশেষ অর্থাৎ অষ্টম চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ তার মৃত্যুর পরে ২০১২ সালে মুক্তি পায়।

পুরস্কার
 বাংলা সাহিত্যে বিভিন্ন দিকে তাঁর সৃষ্টির অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছেন। কথা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৩ সালে লেখক শিবির পুরস্কার  পান, ১৯৮১ সালে বাংলার উপন্যাসে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে মাইকেল মধুসূদন পদক এ সম্মানিত হয়। ১৯৯০ সালে  হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার পান। ১৯৯২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। 

হুমায়ুন আহমেদ চিত্রপরিচালক 
১৯৯২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
‘ শঙ্খনীল কারাগার’ চলচ্চিত্রের জন্য। ১৯৮৮ সালে বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।এছাড়াও আরও অনেক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। 

নুহাশ পল্লী
গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পিজুলিয়া গ্রামে ২২ বিঘা জমির ওপর নুহাশ পল্লী গড়ে তোলেন হুমায়ূন আহমেদ। বাগানবাড়িটির নামকরণ করা হয় স্ত্রী গুলতেকিন ও প্রথম পত্র নুহাশ হুমায়ূনের নামে। বাড়ির উত্তরে থাকা পুকুরটির নাম লীলাবতী, যা তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাওন ও অকালপ্রয়াত কন্যার নামে নামকরণ করা হয়েছে। পুকুরের মাঝখানে একটি কৃত্রিম দ্বীপও রয়েছে।





শেষ জীবন ও মৃত্যু
বৃহদান্ত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর চিকিৎসার জন্য নিউ ইয়র্ক যান তিনি। সেখানে মেমোরিয়াল স্লোয়ান কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা শুরু করেন। দুই পর্বে বারোটি কেমোথেরাপি নেওয়ার পর বেলভ্যু হাসপাতালে তার দেহে অস্ত্রোপচার হয়। প্রথমবার অস্ত্রোপচারের কিছুদিন পর আবার তার দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার হয়।১৯ জুলাই ২০১২ সালে ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তাকে নুহাশ পল্লীতে দাফন করা হয়। 





           

হুমায়ূন আহমেদ কে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্তর

হুমায়ূন আহমেদ কোথায় জন্মগ্রহণ করেন ?
নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে

হুমায়ূন আহমেদ কবে জন্মগ্রহণ করেন?
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর

হুমায়ূন আহমেদের লেখা প্রথম উপন্যাস কি ?
শঙ্খনীল কারাগার

হুমায়ূন আহমেদের প্রথম নাটক কোনটি?
প্রথম প্রহরে

হুমায়ূন আহমেদ কবে মারা যান ?
১৯ জুলাই ২০১২

হুমায়ূন আহমেদ কিভাবে মারা যান ?
বৃহদান্ত্রে ক্যান্সার হবার ফলে তিনি মারা যান










Dhaka Dairy-regularly update all information about all contact information across Bangladesh.Our primary focus on Dhaka related information. এই পেজ টি আপনার বন্ধু ও পরিবারের সাথে শেয়ার করুন

Post a Comment

0 Comments